
অজানা পথের পথিক হলেন আবারও বাংলার মহিলা সাতারু সায়নী ঘোষ এবং তাঁর পরিবার। বাড়ি বালিতে। ছোটবেলা থেকে সায়নীর পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা ভালো নয়। দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে সাতারু হয়ে ওঠা সায়নীর। তার মধ্যে নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদ, বড় হওয়ার জেদ অনেকটাই এগিয়ে নিয়ে গেছে তাঁকে। স্পনসর হারিয়ে আবারও দিশেহারা। মাঝেমধ্যে খুবই হতাশ হয়ে পড়েন। স্পনসর হারিয়ে সায়নী নিজেও চিন্তিত। প্র্যাকটিসেও ঠিকভাবে মন দিতে পারছি না, জানায় সায়নী।
বছর তিনেক আগে ইন্ডিয়ান অয়েলকে স্পনসর হিসেবে পেয়েছিলেন সায়নী। স্পনসর পেয়ে স্বপ্নগুলো ডানা মেলতে শুরু করেছিল। কিন্তু সুখের সময় বেশিদিন থাকল না। ইন্ডিয়ান অয়েলের তরফে প্রতি মাসে ১৪ হাজার করে পেতেন সায়নী। স্পনসর পেয়ে উন্নতমানের ট্রেনিংয়ের জন্য গোয়াতে গিয়েছিলেন সায়নী। তা দিয়েই গোয়াতে ট্রেনিং করে আরও ভাল পারফরমেন্স করার স্বপ্ন দেখছিলেন। সাফল্য পেতে গেলে উন্নতমানের পরিকাঠামোর গুরুত্ব কতটা তা সায়নী হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎই স্পনসরের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, নতুন করে চুক্তি আর নবীকরণ করা হবে না।
সায়নীর ‘বন্ধুদের’ মধ্যে অনেকেরই নানা জায়গায় চাকরি হয়ে গেছে। কিন্তু তাঁর চাকরি এখনও হয়নি। হতে হতেও রেলে চাকরি হয়নি। সায়নীর কোচ সুরজিৎ গাঙ্গুলি বলেন, ওদের খুবই অভাবের সংসার। ছোটবেলা থেকে সেটা আমরা সকলেই জানি। এখনও ওর চাকরি হয়নি। কোনও স্পনসর না পেলে ওকে সাঁতারই ছেড়ে দিতে হতে পারে। আমি খুবই চিন্তিত।
সায়নী ঘোষের বাবা শ্যামল ঘোষের রাতের ঘুম উড়ে যাওয়ার উপক্রম। মেয়ের সাহায্যের জন্য এ দরজা ও দরজা ঘুরেছেন। কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি। স্থানীয় বিধায়ক রাজীব ব্যানার্জির কাছেও গেছেন, কোনও ফল পাননি। নেতা–মন্ত্রী, বিধায়ক ধরেও সুরাহা মেলেনি। ক্রীড়ামন্ত্রীর কাছে গিয়েও কাজের কাজ হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সথেও সরাসরি যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কাজ হয়নি। তিনি বলেন,সারা বছর ধরে অপেক্ষায় থাকি,সায়নীর নাম এবার হয়ত খেলাশ্রীতে দেখা যাবে। প্রতি বছরই তো খেলাশ্রী অনুষ্ঠান হচ্ছে। কী যোগ্যতা লাগে যে ওর নাম আর ওঠে না খেলাশ্রীর তালিকায়। আমরা তো কোনও মন্ত্রীর পাড়ায় থাকি না, তাই হয়তো খেলাশ্রীতে আমার মেয়ের নাম উঠছে না।
সায়নীর বাবা শ্যামল ঘোষ এও জানান, স্পনসর না পাওয়ায় এখন গোয়াতে ট্রেনিংয়ের খরচ জোগাড় করতে চরম সমস্যায় পড়েছেন। তিনি বলেন, আমার মেয়েকে আর কত প্রমাণ করতে হবে বলুন তো ? দেশকে সোনা দিয়েছে। বাংলাকে গর্বিত করেছে। তবু তার দাম নেই।